শতবর্ষ পর দুই দিনব্যাপী হাসন স্মরণোৎসব হচ্ছে বিশ্বনাথে
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১:৪৫ অপরাহ্ণ
মরমি কবি হাসন রাজা—যার গান, দর্শন ও ভাবনায় বাঙালির লোকসংস্কৃতি পেয়েছে নতুন প্রাণ। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, এই সাধককে আজও তাঁর নিজ পৈতৃক ভিটা সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশায় কখনও স্মরণ করা হয়নি। মৃত্যুর এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর এবার ভাঙছে সেই নীরবতা।
প্রথমবারের মতো ‘হাসন রাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ’-এর উদ্যোগে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘হাসন রাজা স্মরণোৎসব’। প্রথম দিন থাকবে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, আর পরদিন হবে রামপাশায় হাসন রাজার পৈতৃক বাড়ির সামনের মাঠে মূল আয়োজন।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সম্প্রতি পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও সুধীজনদের নিয়ে রামপাশার বাড়ি পরিদর্শন করেন।
আয়োজকদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় রয়েছে হাসন রাজার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা, সেমিনার ও বাউল সংগীতের পরিবেশনা। এতে অংশ নেবেন সিলেট, সুনামগঞ্জ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গুণী শিল্পী ও গবেষকরা।
১৮৫৪ সালের ২৪ জানুয়ারি সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার লক্ষ্মণশ্রী জমিদার বাড়িতে জন্ম নেন এই ভাবুক কবি। জীবনের শেষভাগে তিনি বসবাস করতেন রামপাশার বাড়িতে। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে নানা স্থানে হাসন রাজাকে ঘিরে উৎসব হলেও, তাঁর স্মৃতিবিজড়িত রামপাশায় কখনও কোনো আয়োজন হয়নি।
বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে হাসনের সেই বাড়ি। খসে পড়ছে দালানঘরের ইট-পাথর, বিলীন হচ্ছে স্মৃতিচিহ্ন। এই অবস্থায় রামপাশায় স্মরণোৎসবের উদ্যোগে স্থানীয় হাসনভক্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা।
বাউলশিল্পী হুসিয়ার ভান্ডারী, আজিজুর রহমান চৌধুরী ও গীতিকার এম এস রহমান বলেন, “হাসন রাজার স্মরণোৎসব আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আশা করি, এটি নিয়মিত আয়োজনে পরিণত হবে।”
ডা. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী জানান, “দীর্ঘদিনের এক অপূর্ণতা পূরণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমবারের মতো হাসন রাজাকে তাঁর নিজের ভিটায় স্মরণ করা হবে—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
বিশ্বনাথের সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, এ আয়োজন শুধু একটি উৎসব নয়—এ যেন বাঙালির লোকসংস্কৃতির শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার এক আবেগময় যাত্রা।





