পর্যটনের অগাধ সম্ভাবনা থাকলেও উন্নয়নবঞ্চিত জুড়ী
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ৭:০০ অপরাহ্ণ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, হাওর, ঝর্ণা ও নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যে ভরপুর মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা পর্যটনের এক অনন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা, পরিকল্পনার অভাব ও পর্যাপ্ত প্রচারণা না থাকায় এ জনপদটি এখনো দেশের পর্যটন মানচিত্রে যথাযথভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জুড়ী
জুড়ীতে রয়েছে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, যেখানে শীতে আসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি, আর বর্ষায় জলে ভেসে থাকে নৌভ্রমণের সৌন্দর্য।এছাড়া রয়েছে পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট—যেখানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঝর্ণা, যেমন সীতাকুণ্ড, মায়াবন, মায়াকানন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিষকরম।
আরও রয়েছে হাতিনালা গিরিখাত, লাঠিটিলার ঐতিহাসিক আয়রন ব্রিজ, ধসেল পাহাড়ের শিবমন্দির, লালছড়ার কমলা বাগান, সাগরনালের হাড়ারগজ সংরক্ষিত বন এবং সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ চূড়া কালাপাহাড়। খাসিয়া ও মনিপুরি সম্প্রদায়ের জীবনধারা ও তাঁতশিল্প জুড়ীর সাংস্কৃতিক পর্যটনে যুক্ত করেছে আলাদা মাত্রা।
অবকাঠামো ও পরিকল্পনার ঘাটতি
উপজেলায় এখনো নেই মানসম্মত হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো। বর্ষাকালে বহু স্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পর্যটন এলাকাগুলোতে নেই দিকনির্দেশক সাইনবোর্ড, তথ্যকেন্দ্র বা গাইড সেবা—যার ফলে অনেকেই জুড়ীর সৌন্দর্য সম্পর্কে জানেন না।
স্থানীয়দের অভিমত
স্থানীয় উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা ‘পিক অ্যান্ড গো ট্যুরিজম’, বলেন—“সরকার যদি জুড়ীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইকো ট্যুরিজমের উদ্যোগ নেয়, তাহলে এই অঞ্চল খুব দ্রুতই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নেবে।”
উদীয়মান লেখক হাফেজ শামসুল ইসলাম মনে করেন—“জুড়ীর সৌন্দর্য শুধু প্রাকৃতিক নয়, এতে মিশে আছে ইতিহাস ও সংস্কৃতির ছোঁয়া। সরকারি পরিকল্পনা ও স্বীকৃতি পেলে জুড়ী একদিন দেশের গর্ব হবে।”
প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবুল সূত্রধর বলেন,“জুড়ীতে পর্যটন অবকাঠামো সীমিত হলেও হাকালুকি হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘিরে সমন্বিত পর্যটন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।”
পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, “পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক জুড়ীর পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করলে টেকসই পর্যটনের পথ প্রশস্ত হবে।”
সব মিলিয়ে, হাওর, পাহাড়, ঝর্ণা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের মিলনে জুড়ী বাংলাদেশের এক অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। সামান্য পরিকল্পনা ও বিনিয়োগই পারে এ অঞ্চলকে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন হাবে পরিণত করতে।





