‘আনলোকাল’ না ‘লোকাল’ ইস্যুতে উত্তপ্ত সিলেট-৪ আসন
লিমন তালুকদার
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ৯:৩৭ অপরাহ্ণ
সিলেট-৪ আসন এখন একটাই প্রশ্ন ঘিরে উত্তপ্ত—‘লোকাল প্রার্থী চাই’। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের অলিগলিতে বাজছে এই স্লোগান। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, তবে দলের কিছু অংশ এখনো তা মেনে নিতে পারছে না। বিশেষত জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় মানুষের আস্থা ও সেবা দিয়ে এসেছেন, তারা প্রকাশ্যেই বিক্ষোভ করছেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর জৈন্তাপুরের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন একক প্রার্থী হওয়ায় তাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে শক্ত। এই আসনেই এখন দুইপক্ষের মাঝে রাজনৈতিক ও আবেগমিশ্রিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
লোকাল প্রার্থীর দাবিতে রাতের মিছিল
গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা হয়ে গেছে আন্দোলনের মঞ্চ। ছোট ছোট খণ্ড খণ্ড মিছিল একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্লোগান দিয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে: “লোকাল চাই হাকিম ভাই!” “আর নয় বিদেশি, এবারে স্বদেশি!” “হাকিম ছাড়া মানব না!” মিছিলকারীরা হাতের মশাল জ্বালিয়ে রাতের অন্ধকারে পথ আলোকিত করেছে, যেন তাদের দাবিই আলোর পথ দেখায়।
জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন, “দলীয় হাই কমান্ড এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। আমি স্থানীয় প্রার্থী, মানুষ আমাকে চায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে যাব।”
আব্দুল হাকিম চৌধুরীও একই মত প্রকাশ করেছেন: “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমি তা মেনে নেব। তবে বাইরে থেকে আনা প্রার্থী হলে এলাকার মানুষ হতাশ হবে। ভোটাররা স্বদেশি মুখ দেখতে চায়।”
আরিফুল হক প্রচারণার শুরু
আরিফুল হক শুক্রবার বাদ জুমা গোয়াইনঘাটের রাধানগর বাজার জামে মসজিদে নামাজের পর প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি বলেন,“দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এই আসনের প্রতিটি অলিগলি আমার পরিচিত। নির্বাচিত হলে প্রথম এক বছরের মধ্যে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করব। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।”
এসময় উপস্থিত সমর্থকরা উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। কেউ বলেন, “আরিফ ভাই কাজের মানুষ। তিনি সিটি কর্পোরেশনে যেমন উন্নয়নের রেকর্ড স্থাপন করেছেন, সংসদে নির্বাচিত হলে সিলেট-৪-এ সেই ইতিহাস পুনরায় লেখা হবে।”

তবে স্থানীয় হাকিম সমর্থকরা বলছেন, “দুর্যোগ বা দুর্বিপাকে সবসময় হাকিম ভাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি এখানে আছেন, আরিফ নয়।” তাদের অনুরোধ—‘অতিথি প্রার্থী নয়, স্থানীয় নেতা চাই’।
মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আরও রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন, এবং সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী এডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও টানাপোড়েন দেখা দিলেও স্থানীয় নেতা মনে করেন, কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর মাঠের বাস্তবতা নিশ্চিত হবে। ভোটের ফল নির্ভর করবে সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রার্থীর জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর।





