হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব, গ্রামে-গঞ্জে নেই পিঠাপুলির ধুম
নিজস্ব প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৮ অপরাহ্ণ
অগ্রহায়ণ শুরুতেই একসময় গ্রামবাংলা জুড়ে পিঠা-পায়েসের ঘ্রাণ, আত্মীয়-স্বজনের সমাগম, আর নতুন ধানের ভাত রান্নার ধুম পড়ে যেত। এখন তা সব কল্পনায় ও গল্পে সীমাবদ্ধ।
সবকিছু ধীরে ধীরে যেন মিলিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির পাতায়। বর্তমান প্রজন্ম নবান্নকে চেনে গল্পে, সিনেমায়, অথবা পাঠ্যবইয়ের পাতায়। মাঠে নতুন ধান ওঠে ঠিকই, কিন্তু নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য অপেক্ষার উত্তেজনা। আধুনিকতার ছোঁয়া, ব্যস্ততার চাপ আর ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যার কারণে নবান্নের অনুষ্ঠান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কালের বিবর্তনে।
বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হত নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় হেমন্ত কালের অগ্রহায়ণ মাসের যাত্রা শুরু। অগ্রহায়ণকে ঘিরে নবান্নের ঘ্রাণে ভরে উঠে কৃষকের অঙ্গিনা। পিঠা-পুলির ধুম ছাড়াই আসে অগ্রহায়ণ, নবান্ন শুধু একটি দিন নয় সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির গল্প।
হাওরাঞ্চল তাহিরপুরে কৃষকদের ঘরে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। গ্রামীণ জীবন থেকে নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসলেও অনেকে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বাজারে ধানের দাম ভাল এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ভাল ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারায় কৃষকরা বেজায় খুশি।
জানা গেছে, বাংলার প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ এলেই কৃষককেরা দিগন্ত জুড়ে ধানকাটা মাড়াই উৎসবে মেতে উঠেন কৃষক। ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক-কৃষাণীরা। ধান তোলার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে বাতাসে। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠে সোনালী ধানে। নতুন চালের ভাতে ভিন্ন এক আমেজ এনে দেয় কৃষক পরিবারে। অনেক পরিবারে তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর,পায়েসসহ নানা উপাদেয় খাদ্য।
নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হলেও সিলেটের হাওরাঞ্চল বাস্তব জীবন থেকে এই উৎসবটি অচেনা এক দূরে চলে যেতে বসলেও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য।
কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, আগে নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হত। এখন ধুমধাম না থাকলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যটি কোন রকম ধরে রেখেছে তার পরিবার।
দোয়ারাবাজারের মান্নারগাঁও ইউনিয়নের কৃষক লাভলু মিয়া জানালেন, কয়েক বছর আগেও ধুমধাম করে পহেলা অগ্রহায়ণে তিনি নবান্ন পালন করতেন। নবান্ন আসলে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন তিনি। নবান্ন উপলক্ষে ২ দিন আগে সকাল বেলা গোসল সেরে পবিত্র হয়ে বাম হাত দিয়ে এক মুঠি ধান কর্তন করে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতেন। বেশ ক’ বছর থেকে তার বাড়িতে এসব অনুষ্ঠান অনুপস্থিত।
অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা হাসান বলেন, আমি ছোট বেলায় দেখেছি, দাদা-দাদী নানা-নানি আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে নবান্ন উৎসব পালন করত। ধান ঘরে তোলার দিন মসজিদের ইমামকে ডেকে দোয়া পড়িয়ে নবান্ন উৎসব শুরু করা হত।





