‘দ্বীপ চিরকাল জ্বলবে আলো হয়ে’
লিমন তালুকদার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৬:২৪ অপরাহ্ণ
প্রায় এক সপ্তাহের অন্তহীন অপেক্ষা শেষে অবশেষে সিলেটে ফিরল সবার প্রিয় সেই হাসিমাখা মুখ—দ্বীপঙ্কর দাস দ্বীপ। কিন্তু এ ফিরতি যাত্রা কতটা নির্মম, কতটা শোকগাঁথা—তা চোখের জলেই বুঝিয়ে দিলেন তার আপনজন, বন্ধুমহল আর অগণিত অনুরাগী। বুধবার (১৯ নভেম্বর) ভোরে দক্ষিণ সুরমার গোপালটিলায় দ্বীপের লাশ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে এলাকাজুড়ে নেমে আসে হাহাকার। মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও ভক্তরা। কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না—সবাইকে হাসির আলোয় ভরিয়ে রাখা তরুণটি আজ নীরব, নিথর।
পরিবারের অনুরোধে শ্রদ্ধা নিবেদনের বেদীতে কফিন উন্মুক্ত করা হলে হাহাকার আরও বেড়ে যায়। শত শত মানুষ চোখ মুছতে মুছতে শেষবারের মতো এক ঝলক দেখলেন দ্বীপকে—যেন এখনও ঠিক আগের মতোই হাসবেন বলে অপেক্ষা করছেন তিনি। এরপর শুরু হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ঢল। গোপালটিলা এলাকার মানুষের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরিয়ে তোলেন বেদী। আসতে থাকে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ—দূর দূরান্তের অনুরাগীরাও দলে দলে ছুটে আসেন একবার তাকে কাছে দেখতে।
কেউ বলতে থাকেন—দ্বীপ ছিল এক আলোকবর্তিকা। নিজের হাসিতে উজ্জ্বল করত পৃথিবী, আবার মানুষের মুখেও হাসি ফোটাতে ছিল তার অকৃপণ ভালোবাসা। বয়স মাত্র ২১, কিন্তু অর্জন ছিল এক বিশাল আকাশের মতো।অন্য কেউ বলেন—দ্বীপ বড়দের সম্মান করত, ছোটদের আপন করে নিত। তার মাঝে কোনো অহংকার ছিল না, ছিল এক অপরূপ মায়া। হয়তো সেই মায়ায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল সবার হৃদয়।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজনটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করায় সাংবাদিক সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। পরিবারের সদস্যরাও হাতজোড় করে সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং দ্বীপের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া চান।
দ্বীপের বাবা দিব্যজ্যোতি দাস—যে মানুষ আজীবন ছেলের জন্য আশ্রয় হয়ে ছিলেন—আজ তিনি শোকে অবশ, পাথর হয়ে যাওয়া এক জনমানুষ। তবুও চোখভরা অশ্রু নিয়ে তিনি সমবেত সকলের কাছে ছেলের জন্য আশীর্বাদ কামনা করেন। সেই মুহূর্তের নিস্তব্ধতা যেন বাতাসকেও ভারী করে তোলে।
পরে দ্বীপের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুড়ি গ্রামে। সেখানে আবারও মানুষের ঢল নামে। এলাকাবাসী, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করেন তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে। শ্রদ্ধা, স্মৃতিচারণ আর কান্নাভেজা প্রার্থনায় শেষ হয় তার প্রতি অগাধ ভালোবাসার প্রকাশ।
শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বুধবার দুপুর একটায়। এর আগে, মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করেন তার মরদেহ। মানুষের মুখে আজ একটাই কথা—হাসিমাখা সেই ছেলে, এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে কেন, দ্বীপ?তুমি ছিলে আলো—তোমার আলো হয়তো নিভে গেছে, কিন্তু স্মৃতি হয়ে চিরকাল জ্বলবে আমাদেরই হৃদয়ে।





