হবিগঞ্জের চার আসনে বিএনপির তৎপরতা, পাল্লা দিচ্ছে জামায়াত
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৬ অপরাহ্ণ
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে হবিগঞ্জ জেলায়। হাওর, পাহাড়, চা-বাগান ও শিল্পাঞ্চলঘেরা এই জেলায় চারটি আসনেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় বিএনপি–জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই এখন সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান।
বিএনপি তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে হবিগঞ্জ-১ আসনটি এখনো খালি রেখেছে দলটি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চার আসনেই প্রার্থী ঠিক করেছে এবং সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি প্রচারও জোরদার করেছে।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ–বাহুবল): প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রবাসী নেতারা
অধ্যুষিত প্রবাসী এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে দৌড় চলছে হেভিওয়েট কয়েকজন প্রার্থীর। সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ সুজাত মিয়া দেশে এসে প্রচারণা জোরদার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা মুখলেছুর রহমান মুখলিসও মাঠে রয়েছেন।
এদিকে জামায়াত অনেক আগেই এ আসনে প্রার্থী করেছে মো. শাহজাহান আলীকে। এলাকায় সামাজিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে—ড. রেজা কিবরিয়াও এ আসন থেকে নির্বাচনে আসতে পারেন, তবে কোন দলের হয়ে হবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং–আজমিরীগঞ্জ): বড় ভূমিকা হিন্দু ভোটের
হাওরবেষ্টিত এই ভাটি এলাকায় ১ লাখের কাছাকাছি হিন্দু ভোটার রয়েছেন, যা জয়-পরাজয়ের প্রধান নির্ধারক বলে মনে করা হয়। বিএনপি এখানে প্রার্থী করেছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনকে। নিয়মিত গণসংযোগে ব্যস্ত তিনি।
জামায়াতের প্রার্থী—সাবেক ছাত্রশিবির নেতা শেখ জিল্লুর রহমান আযমী। দীর্ঘদিন সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় দলটি এখন কমিটি পুনর্গঠনে ব্যস্ত। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদকে ঘিরেও এলাকায় আলোচনা আছে; তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে পরিচিত “বড় হুজুর” নামে।
হবিগঞ্জ-৩ (শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ–লাখাই): জেলার গুরুত্বপূর্ণ সদর আসন
সদর আসন হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে হবিগঞ্জ-৩। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নেমেছেন। পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র এই নেতার এলাকায় উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা রয়েছে।
জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমদকে। গণঅধিকার পরিষদ ও অন্য ইসলামি দলগুলোর প্রার্থীরাও প্রচারণায় সক্রিয়। আওয়ামী লীগ রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার পর বিএনপি নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী বলে দাবি করছে।

চা-বাগান অধ্যুষিত এই আসনে অতীতে নৌকার ভোটের আধিপত্য থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। চা শ্রমিক ও সনাতন সম্প্রদায়ের প্রায় ৪৫ হাজার ভোট কোনদিকে যাবে তা নিয়েই মূল হিসাব।
বিএনপি প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে রয়েছেন। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। খেলাফত মজলিস থেকেও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রীয় মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদেরের।
আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় হবিগঞ্জের রাজনীতি এখন প্রধানত দুই শক্তির লড়াই—বিএনপি ও জামায়াত। জেলা জুড়ে দল দুটির প্রচারণা, গণসংযোগ এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে। জাতীয় পার্টি বা অন্য শক্তি সক্রিয় হলে ভোটের সমীকরণ নতুন করে বদলাতে পারে বলে স্থানীয় বিশ্লেষকদের ধারণা।





