এতিম শিশুদের জন্য সিলেটে নির্মাণ হচ্ছে বিশ্বমানের স্কুল
নিজস্ব প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ৯:০৪ অপরাহ্ণ
সিলেট সদর উপজেলার ছালিয়া গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরো স্বপ্ন। চারপাশের ভাঙাচোরা পথ পেরিয়ে হঠাৎই চোখে পড়ে লাল টিনের সারি সারি পরিচ্ছন্ন ভবন—যেন নিরাশার মাঝখানে আশার আলো। এই ভবনগুলোতে উঠবে এমন শিশুর হাসি, যাদের মাথায় কোনো অভিভাবকের হাত নেই। যাদের জীবন সংগ্রামে ভরা, অথচ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার মতো সুযোগ খুবই কম। সেই সব এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্যই গড়ে উঠছে ‘ক্যাপ ফাউন্ডেশন ভিলেজ দ্য গার্ডিয়ানস’, একটি বিশ্বমানের আবাসিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—এখানে শিক্ষা, থাকা, খাওয়া সবকিছুই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যেখানে সাধারণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর খরচ শুনলে অনেকে পিছিয়ে যান, সেখানে এই স্কুলের প্রতিটি ইট বসানো হয়েছে মানবিকতার শক্তিকে ভিত্তি করে।
৩য় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ থাকবে এখানে। স্কুলের ভেতরে রয়েছে বিশাল একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইনডোর স্পোর্টস কমপ্লেক্স, তিনটি ডরমেটরি, মসজিদ এবং একটি মনোরম লেক। চারপাশের পরিবেশ দেখে মনে হয়—এই শিশুরা হয়তো জীবনে প্রথমবার এমন শান্তি, নিরাপত্তা আর ভালোবাসার ছায়া পাবে।
ক্যাপ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার ও সিইও আব্দুল নূর হুমায়ুন জানালেন—আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ ১০০ জন এতিম শিশুকে নিয়ে শুরু হবে শিক্ষা কার্যক্রম। শুধু পড়াশোনা নয়, উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দেবে তারা, চাকরির সুযোগও তৈরি করবে। এই উদ্যোগের পেছনে আছেন আরও অনেক নিবেদিত মানুষ, যার মধ্যে অন্যতম চিফ প্যাট্রন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ বাকীর। তার ভাষায়—”এটি একটি পাইলট প্রকল্প। সফল হলে এমন আরও স্কুল গড়ে উঠবে দেশে।”
এই মানবিক উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। সম্প্রতি পর্তুগিজ রাজপরিবারের তিন সদস্য এসে ঘুরে দেখেছেন প্রকল্পটি। লেক উদ্বোধন করেছেন, গাছ লাগিয়েছেন, আর প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন পুরো টিমকে। তাদের কথায়—“এটি শুধু একটি স্কুল নয়, মানবতার উপহার।”
সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্কুল যখন আগামী সেপ্টেম্বর প্রথম আলো জ্বালাবে, তখন হয়তো কোনো বাবা-মায়ের স্নেহহারা শিশু প্রথমবার অনুভব করবে—“আমাকেও কেউ ভালোবাসে। আমার ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল হতে পারে।”
মানবিকতার এই উদ্যোগ শুধু সিলেট নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্কুল হবে—হারানো শিশুদের নতুন ঘর, নতুন পরিবার, আর নতুন আকাশ ছোঁয়ার ঠিকানা।





