কানাইঘাটে নবাগত ইউএনও’র মতবিনিময় সভা বয়কট
কানাইঘাট প্রতিনিধি :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:২০ অপরাহ্ণ
কানাইঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কর্তৃক আহুত বিশেষ মতবিনিময় সভা বয়কট করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী-সহ উপজেলার অন্য সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। নবাগত ইউএনও মো. মেহেদী হাসান শাকিলের বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারের দোসর পাথর-খোকোদের সাথে শুরুতেই যোগসাজশ গড়ে তোলার অভিযোগে রাজনৈতিক দলগুলোর এই বয়কট বলে জানা গেছে।
গত ৩ ডিসেম্বর তারিখে যোগদানের পর ইউএনও আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১২টা পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দলের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। অনুষ্ঠান কভার করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকরা সেথায় উপস্থিত হন। একটা পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন ইউএনও। পরবর্তীতে কয়েকজন সাধারণ নাগরিক যোগদেন এই সভায়।
জানা যায়, যোগদানের মাত্র দুই দিনের মাথায় গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) উপজেলার একটি দুর্গম এলাকায় বিতর্কিত ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী, পাথরখেকো হিসেবে পরিচিত হত্যা মামলা-সহ একাধিক মামলার আসামী তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে উনার বাড়ির পাশের মসজিদে নামাজের পর বয়ান রাখেন ইউএনও শাকিল। মসজিদে বক্তৃতা দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। নেটিজনেরা নবাগত ইউএনও-কে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যায়িত করে কানাইঘাট থেকে প্রত্যাহারের দাবী জানাতে থাকেন।
বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার করে। কানাইঘাট উপজেলার ১ নং লক্ষীপ্রাসাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন এলাকায় ‘পাথর তমিজ’ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত এই চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন। পাথর কোয়ারী অবৈধভাবে ভোগ-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি ইউনিয়ন অফিসেও আসেন না।
দুর্গম এলাকা মুলাগুলে অবস্থিত পাথর তমিজের বাড়িতে গিয়ে নবাগত ইউএনও পাশে দাড়িয়ে বক্তব্য ছবি ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠায় রাজনৈতিক দলগুলো আজকের মতবিনিময় সভা বয়কট করে। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইত্যাদি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মতবিনিময় সভা বিএনপি কর্তৃক বয়কটের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেন কানাইঘাট উপজেলার বিএনপি সভাপতি এবং সাবেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মামুনুর রশীদ মামুন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাষ্টার ফয়সল আহমদ। অন্যান্য দলগুলোর স্থানীয় নেতারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও হিসেবে শাকিল কানাইঘাটে যোগ দেওয়ার পর প্রথম সফর করেন লোভারমুখ পাথর কোয়ারি এলাকায়, যা উপজেলা সদর থেকে অনেক দুরে এবং দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই এলাকা মুলাগুল এলাকা হিসেবেও পরিচিত। অফিসে যোগ দেওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় সেই দুর্গম এলাকায় যাবেন কেন– এমন প্রশ্ন অনেকের। কেউ কেউ বলেন, পাথর কোয়ারির উপর তার দৃষ্টি পড়েছে। এই কারণে শুরুতেই পাথরখেকো আর বালুখেকোদের সাথে দহরম-মহরম গড়ে তুলতে সেথায় গিয়েছিলেন।
ইউএনও শাকিলের দাবী, পাথর তমিজ যে ফ্যাসিবাদের দোসর ও পলাতক আসামী-সেটা তিনি জানতেন না। না জেনে যাবার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্যও নয় উপজেলার ক্ষুব্ধ অনেকের কাছে। তারা বলেন, উপজেলায় যোগদানের পর পর তার নানা ব্যস্ততা থাকার কথা। এত ব্যস্ততা ফেলে তিনি নিশ্চয়ই পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত চেয়ারম্যান এবং ফ্যাসিবাদের দোসর তমিজের এলাকায় গিয়েছেন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে।
তমিজ উদ্দিন ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্ট-ভুক্ত আসামী। কিছুদিন আগে তাকে ইউনিয়ন অফিসে প্রবেশ করতে না দিয়ে স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে। পাথর তমিজকে পদ থেকে অপসারণ এবং অবিলম্বে গ্রেফতার দাবী করছেন কানাইঘাট উপজেলার লোকজন। নবাগত ইউএনও শাকিলকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী উঠেছে রাজনৈতিক মহল থেকে।





