হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের সেই চেনা দৃশ্য
নিজস্ব প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:৫০ অপরাহ্ণ
সময় কেমন নিঃশব্দে বদলে যায়। একসময় মৌলভীবাজারের জুড়ীর গ্রামগুলোতে হেমন্ত মানেই ছিল ধান কাটার আনন্দ, আর সন্ধ্যার আলো নিভু–নিভু হলে উঠোনে গরুর হালে ধান মাড়াইয়ের সেই ব্যস্ততা। শিশুদের হাসি, বড়দের ডাকাডাকি, আর হালের গরুর ছন্দ—সব মিলিয়ে যেন এক গ্রামীণ জীবনের সুর বাজত।
আজ সেই সুর আর শোনা যায় না। গরুর খুরের শব্দ হারিয়ে গেছে, জায়গা নিয়েছে ধাতব মেশিনের ঘূর্ণন। গ্রামের মানুষ জানে—সময় এগিয়েছে, প্রযুক্তি এসেছে। তবুও মনে কোথাও যেন একটু খচখচে শূন্যতা রয়ে যায়।
দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের কৃষক বশির মিয়া বলেন, “একসময় রাতভর ধান মাড়াই চলত। গরুর পায়ের শব্দে পুরো গ্রাম জেগে উঠত। সবাই মিলে কাজ করতাম। এখন সেই দিন আর নেই। যন্ত্র আছে, কাজও হয়—কিন্তু সেই মিলন, সেই আনন্দটা নেই।”
বেলাগাঁও গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, “আমরা জানি যন্ত্রই এখন ভরসা। জমি প্রস্তুত করতে, ধান কাটতে, মাড়াই করতে—সবকিছুতেই গতি এসেছে। কিন্তু গরু দিয়ে ধান মাড়াই ছিল আমাদের জীবনের অংশ। মনে হয়, যেন একটা ইতিহাস চোখের সামনে থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে।”
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন কৃষিকে এগিয়ে নিয়েছে—এটাই সময়ের দাবি। “আগে যে কাজ করতে অনেক সময়, শ্রম ও ঝুঁকি ছিল, এখন তা সহজ হয়েছে। তবু এসব ঐতিহ্যকে নথিভুক্ত করে আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি—কারণ এগুলোই আমাদের কৃষিজীবনের শেকড়ের গল্প।”
সময় এগোচ্ছে, কৃষির কাঠামো বদলে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামীণ জীবনের কিছু দৃশ্য থাকে এমন—যেগুলো অদৃশ্য হয়ে গেলেও মানুষের মনে থেকে যায়।
জুড়ীর মানুষ তাই বলছেন, আধুনিকতার সুফল তারা যেমন গ্রহণ করছেন, তেমনি গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের মতো শত বছরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ায় একটুখানি বেদনা থেকেই যাচ্ছে।
কারণ এই ঐতিহ্য শুধু কাজের পদ্ধতি ছিল না—এ ছিল গ্রামবাংলার সম্পর্ক, হাসি, উৎসব আর একসাথে বেঁচে থাকার গল্প।





