চুনারুঘাটে বন বিভাগের নিলামে হামলা, ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:৫০ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বন বিভাগের জব্দকৃত বনজ দ্রব্যের প্রকাশ্য নিলাম চলাকালে বন কর্মকর্তার ওপর হামলা, নিলামে বাধা সৃষ্টি ও টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় শ্রমিকদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম খান (৪৫) ও বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মি আক্তারের ছোট ভাই সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত ৪–৫ জনকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় মামলা দায়ের করেছেন ডেপুটি রেঞ্জার সৈয়দ আশিক আহমেদ।
এদিকে মামলা দায়ের করায় বাদীকে আটকে রেখে মামলা তুলে নিতে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মারুফ মিয়ার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ, কালেঙ্গা ও রঘুনন্দন রেঞ্জের জব্দকৃত বনজ দ্রব্যের প্রকাশ্য নিলাম চুনারুঘাটে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কার্যালয় প্রাঙ্গণে শুরু হয়। এ সময় দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি রেঞ্জার সৈয়দ আশিক আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা শ্রমিকদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি নেত্রী শাম্মী আক্তারের ভাই সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন নিলামস্থলে এসে হট্টগোল শুরু করেন এবং নিলাম কার্যক্রমে বাধা দেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে জাহাঙ্গীর আলম ডেপুটি রেঞ্জারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও দাঁত ভাঙার হুমকি দেন। একপর্যায়ে সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন।
এসময় সময় জাহাঙ্গীর আলম ডেপুটি রেঞ্জারের প্যান্টের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার আগে নিলাম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন এবং মামলা করলে খুনেরও হুমকি দেন। পরে কর্তৃপক্ষ নিলাম স্থগিত করে।
ঘটনার পর আহত ডেপুটি রেঞ্জার আশিক আহমেদ চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন এবং পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিক দলনেতা জাহাঙ্গীর আলম খান ও ছাত্রদল নেতা দীর্ঘদিন ধরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনের গাছ পাচারের সাথে জড়িত। এমনকি গত ৫ আ’লীগের পতনের পরদিন তাদের নেতৃত্বে সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়ে থেকে গাছ ও আসবাবপত্র লুট হয়। পরে স্থানীয় বিএনপি নেতার মধ্যস্থতায় কিছু আসবাবপত্র ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়াও গত নিলামে ছাত্রদল নেতা মারুফের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ডেপুটি রেঞ্জার সৈয়দ আশিক আহমেদ বলেন, নিলামে হট্টগোল হওয়ায় আমি তাদেরকে শান্ত করতে গেলে জাহাঙ্গীর, সাইফুল ও মারুফ সহ কয়েকজন আমার উপর চড়াও হয়। শারীরিক ভাবে আঘাত করে আমার টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে মামলা করতে থানায় গেলে ছাত্রদল নেতা মারুফ আমাকে আটকে রেখে দীর্ঘক্ষণ হেনস্থা করে এমনকি প্রাণ নাশের হুমকিও দেয়। তাৎক্ষণিক আমি তার পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় মামলার এজহারে তার নাম উল্লেখ করতে পারিনি। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করতে। আশা করি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “মামলা রুজু হয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”




