অনলাইন জুয়ার দাপট:ছাতকে নিঃস্ব তরুণেরা,কোটিপতি এজেন্ট চক্র
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:১৩ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অনলাইন জুয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলার জাউয়াবাজার, গোবিন্দগঞ্জ ও ছাতক পৌরশহর এখন অনলাইন জুয়ার ‘হটস্পট’ হিসেবে পরিচিত। ওয়ান এক্স বেট, ক্যাসিনো, শিলং তীরসহ নানা অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছেন তরুণ–যুবকেরা। আর তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি শক্তিশালী এজেন্ট চক্র।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাউয়াবাজারকে কেন্দ্র করে একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও যুবকগোষ্ঠী অনলাইন জুয়ার ‘এজেন্ট নেটওয়ার্ক’ পরিচালনা করছে। ভুক্তভোগীদের তথ্য, বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বর্ণনা ও অনুসন্ধানে অন্তত ডজনখানেক ব্যক্তির জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে।
জুয়ার টানে অনেকে ব্যবসা–বাণিজ্য, চাকরি ও সম্পদ হারিয়েছেন। কেউ কেউ দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই জুয়ার কারণে মদ, গাঁজা, ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন—চুরি, ছিনতাই ও মোটরসাইকেল–সিএনজি চুরি–সহ নানা অপরাধের হারও বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, জাউয়াবাজারের একজন ব্যবসায়ী—আব্দুল বাছির—এলাকার ‘সুপার এজেন্ট’ হিসেবে পরিচিত। তাঁদের দাবি, তাঁর মাধ্যমে প্রতি মাসে কোটি টাকার লেনদেন হয়। মোবাইল ব্যাংকিং থেকে শুরু করে ব্যাংক হিসাবেও নাকি অস্বাভাবিক লেনদেন চলে। এ বিষয়ে একাধিকবার তাঁর ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। খুদে বার্তাতেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
স্থানীয় আরেক ব্যক্তি রুবেল—সাবেক সিএনজি চালক—এজেন্ট হিসেবে পরিচিত। জাউয়াবাজারে তাঁর একটি বাড়িতে নাকি ‘জুয়ার আসর’ বসানো হয়। রুবেল অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি এখন এসবের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁর আয় আসে কয়েকটি সিএনজি ও মাইক্রোবাসের ব্যবসা থেকে।
এ ছাড়া স্থানীয় যুবক রকি–সহ কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে। ভুক্তভোগী ও বাজারসংশ্লিষ্টদের দাবি, ডিপোজিট বিক্রির মাধ্যমে রকি দ্রুত অর্থ–সম্পদের মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার পর তাঁর সম্পদের উৎস নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। রকি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, পরিবারের প্রবাসী সদস্যদের সহায়তায় তাঁর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
জাউয়াবাজারের ব্যবসায়ী কামরুল ও তাঁর ভাই ফয়েজও স্থানীয়দের কাছে ‘এজেন্ট’ হিসেবে পরিচিত। তাঁরা অল্প সময়ের মধ্যেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন। কামরুল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে।
জাউয়াবাজার ছাড়াও গোবিন্দগঞ্জ রেললাইন, লালপুল সংলগ্ন এলাকা এবং ছাতক পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় ‘ওপেন জুয়ার রিং’ চালানো হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তরুণদের বড় একটি অংশ প্রতিদিন এসব জায়গায় ভিড় করেন।
মিনহাজ (ছদ্মনাম) নামের এক ভুক্তভোগী বলেন,“অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে আমি আমার মোটরবাইক, আইফোন, দোকান—সব হারিয়েছি। এখনো প্রায় সাত লাখ টাকা দেনা। জাউয়াবাজারে কয়েকজনের মাধ্যমে লেনদেন করতাম। বিকাশ–রকেটসহ বহু মোবাইল নম্বর ব্যবহার হয় এসব কাজে।”
জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হযরত আলী বলেন,“উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছাতক থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “সাইবার–সম্পৃক্ত হওয়ায় এসব চক্র শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন। তবু পুলিশ অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”




