সিলেটে ১১জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা,টিলা কাটার অভিযোগে
নিজস্ব প্রতিবেদক ::
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ
ছবি সংগৃহীত
নানা অজুহাতে প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে শত শত বছরের পুরোনো টিলা ও পাহাড়। এই অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের ফলে প্রকৃতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে মানবজীবনও।
সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজায় ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি টিলা কাটার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ।,
এ বিষয়ে মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।
মামলার প্রধান আসামি হলেন সিলেট নগরের হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও টিলার মালিক মালিক উজ্জামান। অন্য আসামিরা হলেন তারাপুর চা-বাগানের স্টার টি স্টেটের ব্যবস্থাপক ও প্রধান সমন্বয়ক রিংকু চক্রবর্তী, মোহাম্মাদীয়া এলাকার জাবেদ, হালেদ ও জাহাঙ্গীর, দুসকি এলাকার আমির হামজা ও সেলিম, মোহাম্মাদীয়া এলাকার বিল্লাল, দুসকি এলাকার কয়েছ আহমেদ এবং মোহাম্মাদীয়া এলাকার জুবায়ের আহমেদ ও রাজু আহমেদ। মামলায় আরও ছয় থেকে সাতজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,(গত ৮ সেপ্টেম্বর) গোপন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মহানগর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খানের নেতৃত্বে সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজার ৪৬৬ নম্বর খতিয়ানের ২১৯২ নম্বর দাগের অন্তর্গত দৃশ্যমান ও রেকর্ডীয় টিলা কাটার স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে টিলা কাটা এবং টিলার মাটি অপসারণের প্রমাণ মেলে। তবে তখন ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
টিলাটি মামলার প্রধান আসামি মালিক উজ্জামানের রেকর্ডীয় ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়। এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য টিলা কেটেছেন। তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে আনুমানিক ২৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ১১৫ ফুট প্রস্থ, ৪৩ ফুট গড় উচ্চতা এবং ১১ লাখ ৬২ হাজার ৭৫ ঘনফুট দৃশ্যমান টিলারকম ভূমি কেটে মাটি অপসারণ করেছেন। এটা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৬ (খ) অনুযায়ী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
(৬ সেপ্টেম্বর) ‘সিলেটে পাথরের পর টিলাও সাবাড়’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই স্থানীয় প্রশাসন টিলা কর্তনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে ৭–৮ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর উপজেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় টিলা কর্তনকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি টিলা কাটায় একজনকে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
এরপর ৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের সীমান্ত শাখা থেকে এক সরকারি আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সিলেটে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে টিলা কাটলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।,
টিলা ও পাহাড় প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। এগুলো শুধু ভূ-প্রকৃতি নয়, বরং জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু ও স্থানীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।





