নেই নিশ্চিন্ত ঘুমের গ্যারান্টি

সিলেট আই ডেস্ক ::
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ
ছবি :সোশ্যাল মিডিয়া
শহরের ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাথে রাতের অন্ধকার নামলেই শুরু হয় তাদের জীবনের নীরব লড়াই। এক তরুণী মা তার দুই শিশুকে বুকে জড়িয়ে ঠান্ডা পাথরের ওপর ঘুম পাড়িয়ে দেন। পাশে ছোট্ট একটি থালা—কয়েকটি মুদ্রা আর টুকরো খাবারই যেন জীবনের সম্বল।
দিনভর গরম, ধুলো, কোলাহল; আর রাতে শীতল বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে কেটে যায় সময়। চারপাশের মানুষের ভিড় থাকলেও নেই নিরাপদ ঘর, নেই নিশ্চিন্ত ঘুমের গ্যারান্টি। পথচারীদের চোখে-মুখে মিশ্র অনুভূতি—কেউ সহমর্মিতা নিয়ে কয়েকটা টাকা দিয়ে যান, কেউ আবার কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
দারিদ্র্য, অচলাবস্থা আর অমানবিক বাস্তবতা এই মা ও শিশুদের প্রতিটি দিনকে কঠিন করে তুলছে। সমাজের অবহেলা যেন প্রতিনিয়ত তাদের কাঁধে নতুন বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। তবুও মায়ের অকৃত্রিম মমতা তাদের একমাত্র শক্তি—তার বুকে লুকিয়েই শিশুরা খুঁজে পায় নিরাপত্তা ও ঘরের উষ্ণতা।
হালকা মাত্রার বৃষ্টি। ফুটপাতে শোয়ে ভিজছে মহিলা। পাশের বাটিতে ভিজছে কিছু টাকা। ভিজছে দুইটি শিশুও। ছোট শিশুটির বয়স এক প্লাস। বড় শিশুটির বয়স চারের কাছাকাছি (আনুমানিক)। মহিলার মাথা এবং মুখ ওড়নায় ঢাকা। বড় শিশুটির কপাল তার মা’র মাথায় ঠুকছে আর মা, মা বলে ডাকছে। ছোট শিশুটি গভীর ঘুমে। বৃষ্টির পানিতে ভিজেগেছে তার শরীর, তবুও ভাঙছে না ঘুম। বড় বাচ্চাটির ডাকও যেনো মহিলার কানে যাচ্ছে না। এসব ভিক্ষাবৃত্তির কৌশল ভেবে মহিলার প্রতি রাগান্বিত হয়ে আমি চিল্লিয়ে ডাকলাম। কিন্তু যেই-সেই। মহিলার কোনো সাড়া-শব্দ নেই। আমার সাথে আমার ইস্ত্রী ছিলো। ও মহিলার গায়ে ধাক্কা দিয়ে ডাক দিতেই হুড়মুড় করে উঠে বসলো। টান দিয়ে ছোট বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ওড়না দিয়ে শরীরের পানি মুছে দিচ্ছে আর বলছে, কহন বিষ্টি আইলো! আমি বুজিনাই। আমার সইলডা খারাপ। আতে অনেক বিষ। কোনসুম যে ঘুমাইয়া পড়ছি জানিই না।
আমি আর আমার স্ত্রী রাস্তার বিপরীতে একটি বন্ধ দোকানের বারান্দা দেখিয়ে ওখানে যেতে বললাম। মহিলাটি বাচ্চাসহ দ্রুত ওখানে গেলো। বৃষ্টি থাকায় আমরাও ওখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। কথা প্রসঙ্গে আমার স্ত্রী বড় বাচ্চাটিকে দেখিয়ে মহিলাকে বললো, এই বাচ্চাটি আমাকে দিয়েদিন। আমি ওকে খুব যত্নে রাখবো। ও আমার কাছে অনেক ভালো থাকবে। আপনার এতো কষ্ট করা লাগবে না। দিবেন?
মহিলা বললো, না না। আমি ওরে পড়ামু। ও আমারে ছাইড়া যাইবো না। ও আমারে থুইয়া থাকা পারবো না।
পৃথিবীতে এমন অসংখ্য লোক আছে যাদের তুমি এভাবে না রাখলেও পারতে। তাছাড়া, এদেরকে দেখিয়ে আমাদেরকে তুমি যা শিখাতে চাও তাইবা কয়জনে শিখি?
এ দৃশ্য শুধু করুণার নয়; এটি সমাজের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—কবে এই অসহায়দের জন্য আমরা একটুখানি নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করব?
সূত্র : সোশ্যাল মিডিয়া