সীমান্তে বেপরোয়া গরু চোরাচালান,ক্ষতির মুখে সুনামগঞ্জের খামারিরা
সিলেট আই নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ
নীরব চাকলাদার :
সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা। বাজারে ভারতীয় গরুর দাপটে দেশীয় গরুর দাম কমে যাওয়ায় অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় বেড়া না থাকায় চোরাচালান রোধে জটিলতা রয়েছে। তবে সরকার, বিজিবি ও প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
খামারিদের লোকসান
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বাদেসাদকপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা ইকবাল হোসেন জানান, চাকরি না পেয়ে তিনি গরু মোটাতাজাকরণের খামার শুরু করেন। ২৭ লাখ টাকার মূলধনে ব্যবসা শুরু করে প্রথমে লাভবান হলেও, ভারতীয় গরু ঢুকতে শুরু করলে বাজারে দাম পড়ে যায়। লোকসানে পড়ে সাড়ে সাত লাখ টাকার ক্ষতি গুনে খামার বন্ধ করতে বাধ্য হন তিনি।
একই অভিযোগ করেন সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের খামারি ও জেলা ডেইরি, মৎস্য ও অ্যাগ্রো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দারু মিয়া। তিনি বলেন, “ভারতীয় চোরাচালানের গরুর কারণে স্থানীয় গরুর দাম পড়ে গেছে। ফলে আমার খামারসহ আরও দুইটি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে বর্তমানে ৭৩৭টি গরুর খামার আছে। তবে কতগুলো খামার বন্ধ হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বিভাগটির কাছে নেই।
চোরাচালানের গরুতে দাপট সীমান্তের হাটে
প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় গরু প্রধানত দোয়ারাবাজার সীমান্তের বিভিন্ন পশুর হাটে বিক্রি হয়। সেখানে স্থানীয় ইজারাদার ও চোরাকারবারিদের যোগসাজশে চোরাচালানের গরু বৈধতা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করা হয়। ভুয়া রশিদ তৈরি করে এসব গরু পরিবহন করা হয় বলেও জানা গেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সীমান্ত এলাকা থেকে ১,০৬৪টি ভারতীয় গরু জব্দ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা সীমান্ত থেকে ১৪টি গরু আটক করা হয়।
বিজিবির দাবি: সীমান্ত দুর্গম, তবু অভিযান অব্যাহত
বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল একেএম জাকারিয়া কাদির বলেন, “দুর্গম সীমান্ত এলাকায় টহল চালাতে প্রতিবন্ধকতা আছে, তবুও বিজিবি দিনরাত কাজ করছে। দোয়ারাবাজার সীমান্তের কাছাকাছি পশুর হাটগুলো সরানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত এক বছরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার গরু জব্দ করা হয়েছে।”
সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত ভারতের সঙ্গে লাগোয়া। টিলা, নদী ও হাওর এলাকায় টহল জটিল হওয়ায় চোরাচালানকারীরা সক্রিয় থাকে। বিজিবির ১৯টি বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) থাকলেও এসব এলাকায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কঠিন।
প্রশাসনের অবস্থান
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, “কিছু খামারে ভারতীয় গরু কিছুদিন রেখে পরে সীমান্ত হাটে বৈধভাবে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখলে চোরাচালান রোধে অভিযান আরও কার্যকর হবে।”
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “সীমান্তের কোনো পশুর হাটে ভারতীয় গরু বৈধ করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ জাসদের কৃষি ও খাদ্যবিষয়ক সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, “চোরাচালান রোধে বিজিবির পাশাপাশি তথ্য ফাঁস বন্ধ করাও জরুরি। সঠিক কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে সীমান্তে চোরাচালান অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”
টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সুনামগঞ্জ সভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বলেন, “চোরাচালানের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, আর স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যারা এই চক্রে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”





