বিয়ানীবাজারে বাড়ছে আত্মহত্যার ছায়া
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি :
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ৩:২৬ অপরাহ্ণ
সিলেটের বিয়ানীবাজার যেন এক অদৃশ্য মৃত্যুর মিছিলের সাক্ষী। একের পর এক প্রাণছাড়া ঘটনা স্থানীয় পরিবারগুলোকে দিশেহারা করেছে, আর সমাজকে হতবাক। গত কয়েক বছরে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানুষকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে—আমরা কি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি?
২০২২ সাল বিয়ানীবাজারের ইতিহাসে ভয়ংকর হয়ে আছে। মাত্র ৮ মাসে ঘটেছে ১৪টি আত্মহত্যা। সেই বছরের জুলাইয়ে কলেজ শিক্ষার্থী **হাজেরা বেগমের** ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়। একের পর এক তরুণের জীবন শেষ হয়—মোহাম্মদ আলী, ইয়াসমিন শাওন, আর এমনকি স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার সন্তানও এর শিকার। সময়ের সাথে পরিস্থিতি বদলায়নি।
২০২৫ সালেও আমরা শুনতে পাই নতুন মর্মান্তিক খবর—**ফয়ছল আহমদ, তামান্না বেগম, আবু তাহের**– সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন এই কঠিন যাত্রায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা **ডা. মনিরুল হক খান** বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য এখন সবচেয়ে বড় সংকট। মানুষ সংকটে পড়ে চিকিৎসা নিতে পারে না বা সাহস পায় না। এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ।”
অর্থনীতির উন্নতির মাঝেও পরিবারে দূরত্ব, সম্পর্কের দুর্বলতা এবং মানসিক চাপ বেড়েছে, মনে করেন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যাপক **আব্দুর রহীম সবুজ**। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নতি মানসিক ভারসাম্য সরবরাহ করতে পারে না, যদি পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না থাকে।” পুলিশের বিশ্লেষণও একই কথা বলে—পারিবারিক কলহ, ঋণের বোঝা, আর্থিক সংকট—এগুলোই মানুষকে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
থানা অফিসার **আশরাফউজ্জামান** বলেন, “প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে আলাদা গল্প আছে। মানুষ তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে পারছে না। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে পারলে, এমন মৃত্যু অনেকটা কমানো সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আত্মহত্যাগুলো কেবল ব্যক্তিগত নয়, সমাজেরও প্রতিফলন। একাকিত্ব, পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা মিলেই তৈরি করছে ‘নীরব আত্মহননের সমাজ’। আমাদের সচেতন হওয়া ছাড়া এই দুঃখের চক্র থামানো যাবে না।





