গ্রেপ্তার-আতঙ্কে পুরুষশূন্য মাধবপুরের দুই গ্রাম
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:২৩ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা ও বেঙ্গাডোবা গ্রাম এখন কার্যত পুরুষশূন্য। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে চার দিন ধরে দুই গ্রামের পুরুষেরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, ঘরে রয়েছেন শুধু নারী ও শিশুরা। এতে পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যের সংকটসহ নানা মানবিক সমস্যা। পুলিশের ভয়ে বাড়িতে আসছেন না কোনো আত্মীয়-স্বজনও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নোয়াপাড়া বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত রবিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে দুই গ্রামের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। আহতদের হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সংঘর্ষ থামাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়।
এ সময় থানার ওসিসহ ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন সোমবার (১ ডিসেম্বর) পুলিশ অ্যাসল্ট আইনে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। সেখানে অজ্ঞাত আসামি রাখা হয় দুই হাজার জনকে। এরপর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছে।
ইটাখোলা গ্রামের জুলেখা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী কোথায় পালিয়ে আছেন, জানি না। ঘরে বাজার-সদাই নেই। বাচ্চাদের নিয়ে দুইবেলা খেয়ে বেঁচে থাকার উপায় দেখছি না।’
একই গ্রামের আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরার কেউ মারামারিতে যায়নি, তারা বাড়িতেও ছিল না।পুলিশের ডরে বাড়ি ছাইরা গেছে। আমরা বড় অভাবের মাঝে আছি।’
বেঙ্গাডোবা গ্রামের স্বপ্না বেগমসহ দুই গ্রামের কয়েকজন জানান, ৩০ ডিসেম্বর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পরে দুই গ্রামবাসী সমঝোতা করে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন। কিন্তু পুলিশ হয়রানি করছে দুই গ্রামের মানুষকে। যারা মারামারিতে ছিল না, তাদের বাড়ি-ঘরেও প্রতি রাতে অভিযান চালিয়ে হয়রানি করছে প্রশাসন।
এদিকে হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদ উল্ল্যা। তিনি বলেন, ‘দুই গ্রামের মারামারি ছিল ভয়াবহ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু সংঘর্ষকারীরা পুলিশের উপর হামলা করে। এতে ১২জন পুলিশ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৮ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশের কাজ হয়রানি করা নয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। ধৃত আসামিদের জবানবন্দি এবং সংঘর্ষের ভিডিও দেখে দেখে তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’





