বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন



Repoter Image

জাহিদ উদ্দিন ::

প্রকাশ ২৩/০৬/২০২২ ১৫:০০:১৭

সিলেটে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের জনজীবন সিলেটে বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে মরার উপরে খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে টিলাধস। বন্যার পাশাপাশি সিলেটে নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে টিলাধসের ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় ঘটছে ছোট বড় টিলাধসের ঘটনা। সিলেটে টিলা ধসের ঘটনায় গত দেড় মাসে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে অনেকে আহতও হয়েছেন।

সর্বশেষ গত ৬জুন ভোরে জৈন্তাপুরে টিলা ধসে নিহত হয়েছেন একই পরিবারের চারজন। জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজানি গ্রামে এ টিলাধসের ঘটনাটি ঘটে। 

অতিবৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে পাশের উঁচু টিলা টিনশেড ঘরের ঘুমন্ত মানুষের ওপর ধসে পড়ে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান একই পরিবারের চার সদস্য। আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন। নিহতরা হলেন জুবের আহমদ (৩৫), তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩০), তাদের পাঁচ বছরের ছেলে সাফি আহমদ ও জুবের আহমদের ভাবি শামীমারা বেগম (৪৮)। 

গত ১৪ মে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের চক্রবর্তী পাড়া গ্রামে ঘুমের মধ্যে থাকা অবস্থায় টিলা ধসে প্রাণ হারান এনজিওকর্মী অপু পাল। এ ঘটনায় তার ভাইও আহত হন। 

গত ৪ জুন রাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নে উত্তর আশিঘর, ঈসাপুর এলাকায় টিলা ধসে ছয়টি বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

গত ১২ মে সিলেট সদর উপজেলা খাদিম নগর ইউনিয়নের সাহেবের বাজার রামপুর গ্রামে টিলা ধসে কাঁচাঘরসহ তিনটি পাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই গ্রামে আরো তিনটি বাড়িতে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। ওই দিনই গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর প্রথম খণ্ড নয়াগ্রামে হাফিজ মো. ফয়জুল করিমের ঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষনে এ উপজেলায় টিলাধস মারাত্বক আকার ধারণ করে। এক দিকে বন্যা অপরদিকে টিলাধস আতংকে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গত কয়েকদিনে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় টিলাধসের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও অনেকেই আহত হন। এছাড়াও ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চূর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। টিলাধস মারাত্বক আকার ধারণ করেছে উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়ন, আমুড়া ইউনিয়ন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, লক্ষিপাশা, ঢাকাদক্ষিণ সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের টিলা ধসে ঘটনা ঘটে। অনেক স্থানে টিলাধসে মাটিতে রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। পরে মাটি সরিয়ে রাস্তার চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিলাধসে পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের ইয়াগুল গ্রামের কৃষক সাহেদ আহমদের বাড়ি টিলাধসে চূর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। এতে করে অসহায় হয়ে পড়ে সাহেদ আহমদের পুরো পরিবার। পৌর এলাকার ০৬ নং ওয়ার্ডের মৃত জুনাব আলীর ছেলে শামিম আহমদের ঘর, আমির আলির ঘর, হাসান আহমদের ঘর, কামরুল ইসলামের ঘর, মৃত জরিদ আলির ছেলে জামাল আহমদের ঘর, মৃত মাসুক মিয়ার ছেলে মনু মিয়ার ঘর, মৃত মাসুক আলীর ছেলে  আজজুল মিয়ার ঘর, মৃত জগু মিয়ার ছেলে সমিজ বাবুর্চির ঘর, মৃত আছাব আলীর ছেলে তাজ উদ্দিনের ঘর, আজিজুল আলীর ছেলে রাজু আহমদের ঘর, ঘোগারকুল এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে বাক প্রতিবন্ধী নজির আলির ঘর, মৃত নম মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া ও মৃত জলিল মিয়ার ঘর টিলাধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার বলেন, সিলেটের ছয় উপজেলাসহ সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০১১ সালে আদালতের একটি রিটে ১ হাজার ২৫টি টিলার পরিসংখ্যান দেখা যায়। বাস্তবে অনেক টিলার অস্তিত্বই নেই। ভূমিখেকোরা টিলা কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে। প্রশাসনের খুব একটা তদারকি নেই। অবাধে টিলাকাটার ফলে সিলেটে টিলাধস ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে।

সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, টিলা কিংবা পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট আই নিউজ / আইনিউজ/জেইউ

মাই ওয়েব বিট

আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর মনিটরিং করার জন্য এটা ব্যবহার করতে পারেন, এটি গুগল এনালাইটিক এর মত কাজ করে।

ফেসবুক পেইজ