সাইফুল ইসলাম বাবু, জৈন্তাপুর ::
প্রকাশ ১৮/০৯/২০২৩ ০৪:১৯:০৯
জনদুর্ভোগ, মানুষের ভোগান্তি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পরিবেশ বিপর্যয় কিংবা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকি এই রকম শিরোনাম নিয়ে হরহামেশা অনেক সংবাদ আমরা দেখে আসছি।এ রকম জনদুর্ভোগের চিত্র গুলো বিশেষ ভাবে জনবহুল, ঘনবসতিপূর্ণ পৌর কিংবা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় থাকাটা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে আমরা দেখি।
কিন্তু সকল শিরোনামকে হার মানিয়ে জৈন্তাপুরের সদরের মত মফস্বল এবং ঘনবসতিমুক্ত একটি এলাকা আজ মহা দুর্ভোগের স্বীকার। এ যেন চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গননার মত। সবকিছু চোখের সামনেই ঘটছে কিন্তু যেন দেখার কেউ নেই।
বলছিলাম জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে খাসিয়াহাটির প্রবেশমুখের কথা। ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক জৈন্তেশ্বরী রাজবাড়ীর সর্বশেষ পুরার্কৃতী সংরক্ষণ ও সংস্কারে যখন ইরাদেবী মিলনায়তনে সংস্কার কাজ চলছে ঠিক তার বিপরীতে চলছে মানুষ সৃষ্ট পরিবেশ ধ্বংসলীলা।
সরকারি স্কুল ফটকের বিপরীতে জৈন্তা রাজ্যের ইতিহাসের ১৮৯৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে যাহা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক নামে পরিচিত। সেই ভূমিকম্পে আংশিক ভেঙ্গে পড়া রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ এখন ময়লার ভাগাড়।
স্টেশন বাজারের হকারদের উচ্ছিষ্ট কাঁচামাল, পলিথিন, হোটেল বর্জ্য থেকে শুরু করে সকল ধরণের ময়লা আবর্জনা ফেলার স্হান বানিয়ে ফেলা হয়েছে এই জায়গাটিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ এলাকার সচেতন মহল, বিভিন্ন ছাত্র সংঘটন থেকে শুরু করে স্বচিত্র প্রতিবাদ করলেও যেন দেখার কেউ নেই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়লার আবর্জনার স্তুপের উচ্চতা তিনফুটের মত, সাথে আছে বাড়তি জলাবদ্ধতা। তিনশত ফিট দূর থেকেও দুর্গন্ধের স্বিকার হতে হচ্ছে। সরকারি স্কুল,লামনীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসরুমে বাতাসের সাথে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে হরহামেশাই। এ এক জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে দুই প্রতিষ্ঠানে।
আর আশপাশে গড়ে ওঠা বিল্ডিং ফ্লাটে বসবাসকারীদের মধ্যে ক্ষোভের কোন শেষ নেই। স্হানীয় বাসিন্দা ইমরান আহমেদ সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম ক্ষোভের সহিত বলেন,এটা বলতে লজ্জা লাগে। আমরা কোন সমাজে বাস করছি। চোখের সামনে ধীর গতিতে সবকিছু ঘটে চলছে কিন্তু দেখেও যেন কেউ দেখে না। তিনি জানান এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের চরম ব্যর্থতা।
জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানা জাফরিন রোজী জানান, ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ স্কুলের সামনে এই ময়লা আবর্জনার ভাগাড় এটা কিভাবে মেনে নেয়া যায়। প্রতিদিন আসা যাওয়া টিফিন আওয়ারে আমার প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি বাচ্ছাগুলোকে দুর্গন্ধের সাথে লড়াই করতে হয়।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশ জোনের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রতন শেখ বলেন, ছেলেমেয়েকে সরকারি স্কুলে অধ্যয়নের সুবাধে এখানে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে থাকি।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় আমরা ও আশপাশের বাসিন্দারা ২৪ ঘন্টা দুর্গন্ধের সাথে বসবাস করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জৈন্তাপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে জানতে দেখতে জৈন্তাপুর রাজবাড়ীতে অসংখ্য দর্শনার্থীরা আসেন। জাফলং এ দায়িত্বপালনকালে অনেককের অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তারা জৈন্তাপুরের প্রত্নতত্ত্ব নির্দরশনের এই বেহাল দশা দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে জৈন্তাপুর স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন,এর আগে সমিতির পক্ষ থেকে কয়েকবার তারা পরিস্কার করেছেন। বর্তমানে সমিতির অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ীদের আলাদা পলিথিন ব্যবহার করে সুইপার দিয়ে ময়লা অপসারণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি দাবী করে গৃহস্থালির ময়লা আবর্জনা ও ভ্রাম্যমান হকারেরা এসব নোংরা করার সাথে জড়ীত যারা আমাদের ব্যবসায়ী সমিতির অন্তর্ভুক্ত নয়।
এবিষয়ে নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলী বলেন, বহুবার চেষ্টা চলিয়েও শুধু ব্যবসায়ী ও আবাসিক বাসিন্দারা পরস্পরকে দোষারোপ করে। তিনি শীঘ্রই নিজ উদ্যেগে ময়লা আবর্জনা অপসারণ করবেন বলে জানান।সেই সাথে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি না হলে প্রত্নতত্ত্বের এই জায়গায় ময়লা ফেলা রোধ কখনোই সম্ভব হবেনা। তাই ভবিষ্যতে এই স্হানটিকে সম্মিলিতভাবে পরিছন্ন রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।
সিলেট আই নিউজ / এসএম
ফেসবুক পেইজ
ফেসবুক মন্তব্য