আই নিউজ ডেস্ক ::
প্রকাশ ২২/১০/২০২৩ ১১:৫৯:০৬
তিন সন্তানের বাবা রিপন ভূঁইয়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের খাইছড়া চা-বাগানে কাজ করেন। দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি এবং অন্য ভাতাসহ সপ্তাহে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো পান। প্রতি সপ্তাহের বুধবার মেলে এই টাকা। বছর দুয়েক আগেও রিপন ‘পেমেন্টের দিনে’ হাতে টাকা পেয়েই ছুটতেন পাট্টায় (মদের দোকান)। বুঁদ হতেন নেশায়। কিন্তু এখন আর সেখানে যান না তিনি।
রিপন বলেন, ‘পেমেন্ট পেলিই একন আর আমরা পাট্টায় যাই না। ছেলেপিলে পড়াশোনা খরে। অরা মানা খরে। শরীল-স্বাস্থ্য খারাপ হয়। তাই মদ ছাইড়ছি।’
রিপনের মতো শ্রীমঙ্গলের অনেক চা-শ্রমিকই এখন সচেতন। আগের মতো হাতে টাকা এলেই উড়িয়ে দেন না। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি বলেন, ‘একসময় প্রায় সব চা-শ্রমিকই মদে আসক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই।শতকরা প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশই কমে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চা-শ্রমিকদের মধ্যে মদের প্রচলন বহু পুরোনো। উৎসব-পার্বণে তো অবশ্যই, এমনকি দৈনন্দিন বিনোদনের অনুষঙ্গ হিসেবে মদকে বেছে নেন তাঁরা। কথিত আছে, ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানগুলো গড়ে তোলার সময়ই শ্রমিকদের মদে আসক্ত করে তোলা হতো, যেন তাঁরা নিজেদের অধিকার, দাবি-দাওয়া সম্পর্কে সচেতন হতে না পারেন। প্রতিটি বাগানেই গড়ে উঠেছিল একাধিক পাট্টা। এখনো সরকারি অনুমোদনে বাগানগুলোয় মদের পাট্টা চলছে। হারিয়া, লাংগি, চুয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের মদ বিক্রি হয় এসব পাট্টায়। দাম কম হওয়ায় এবং সহজে পাওয়া যায় বলে শ্রমিকেরা মদে আসক্ত হন।
শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, শ্রীমঙ্গলে ছোটবড় মিলিয়ে ৪০টির মতো চা-বাগান আছে। এই বাগানগুলোয় সরকার অনুমোদিত পাট্টা আছে ১৮টি। অবৈধ পাট্টাও রয়েছে, এগুলো বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলে।
বাড়ছে সচেতনতা
শ্রীমঙ্গলে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। সংস্থাটির পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, মদের পাট্টা প্রায় সব বাগানেই আছে। তবে আশার কথা হলো, মদে আসক্ত শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। তিনি জানান, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করার কাজ করছে। এই কিশোর-কিশোরীরাই তাদের মা-বাবাকে মদের ক্ষতিকর দিকগুলো জানাচ্ছে। এভাবে পুরো চা-শ্রমিক গোষ্ঠীই সচেতন হয়ে উঠছে।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা জানান, বাগানগুলোয় অস্বাস্থ্যকরভাবে মদ তৈরি করা হয়। এগুলো টানা কয়েক বছর খেলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এসব মদ খেয়ে অনেক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে। এসব বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠায় শ্রমিকেরা মদ ছাড়ছেন।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের যুবক্লাবের সদস্য স্থানীয় যুবক সুকেশ বাকতি বলেন, ‘পরিবারের কর্তা মদে আসক্ত হলে পুরো পরিবারটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মদের পেছনে আয়ের বড় অংশ চলে যায়। ছেলেমেয়েরা সুন্দর জীবন থেকে বঞ্চিত হয়। এই কথাগুলো আমরা সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করি। এভাবে আমরা দেখেছি, অনেকেই মদের নেশা ছাড়তে পেরেছেন।’
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। সুন্দর জীবনের জন্য তারা মদের মতো ক্ষতিকর জিনিসগুলো পরিহার করছে।
সিলেট আই নিউজ / এসএম
ফেসবুক পেইজ
ফেসবুক মন্তব্য