

সিলেট আই নিউজ ::
প্রকাশ ০৮/১১/২০২৪ ০১:১৩:০৬

মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ফাহিম ::
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ফ্যাসিস্ট’ এখন বহুল উচ্চারিত শব্দ।২৪ এর অভ্যুত্থানের পর একটি বাচ্চাও এই শব্দের সাথে পরিচিত।আওয়ামীলীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকার’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
‘ফ্যাসিজম’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ কী-
ইতালিয় শব্দ 'ফ্যাসিমো' এসেছে 'ফ্যাসিও' থেকে। অন্যদিকে 'ফ্যাসিও' শব্দটি এসছে ল্যাটিন শব্দ 'ফ্যাসেস' থেকে।
ফ্যাসিজম হচ্ছে একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং গণআন্দোলন, যেটি ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছিল।
ফ্যাসিবাদের উৎপত্তিঃ
‘ফ্যাসিজম’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ ধারণাটির উৎপত্তি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইটালিতে। এরপর এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে জার্মানি এবং ইউরোপের আরো নানা দেশে।
ফ্যাসিবাদের জনকঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত ইটালি অসহায় মানুষ চাচ্ছিল এমন এক নেতা যে দেশকে স্থিতিশীলতা এবং শক্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। এই সময় ফ্যাসিস্ট শব্দটির অর্থ কেহ জানতো না।
কিন্তু এই মতবাদ ধীরে ধীরে ইতালির জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। যা হতাশার মাঝে মুক্তির প্রতীক হিসাবে গৃহীত হয়েছিল এর ধারণার পিছনে যিনি ছিলেন তিনি হলেন বিনীত মুসোলিনি। তার পুরো নাম বেনিতো আমিল্কারে আন্দ্রেয়া মুসোলিনি।
মুসোলিনি ফ্যাসিবাদের নামে গণতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতার কবর রচনা করেন।
ফ্যাসিবাদের যাত্রাঃ
১৯১৯ সালে মুসোলিনি গঠন করেন ফ্যাসিস্ট অফ কম্বেট নামে একটি আন্দোলন যার উদ্দেশ্য ছিল ইতালিতে ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা অবসান গঠন।
ফ্যাসিবাদের আদর্শের কেন্দ্রে ছিল জাতীয় শক্তি ও কর্তৃত্বের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মুসোলিনির মতে একনায়কতন্ত্রই পারবে ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে এর উদ্দেশ্যে তিনি গঠন করেন ব্লাক শার্ক নামে একটি সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট বাহিনী।
যা ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা, ভিতী প্রদর্শন করে বিরোধী শক্তিকে দমন করতে শুরু করে। ১৯২২ সালে মুসোলিনি ও তার বাহিনী রোড অন মার্চ নামক এক ঐতিহাসিক পদযাত্রায় আয়োজন করেন।
এতে হাজার হাজার ফ্যাসিস্ট সমর্থকদের পথয যাত্রায় দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইমানুয়েল বিপদের মুখে পড়ে মুসোলিনিকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। ৩৯ বছর বয়সে মুসোলিনী প্রধানমন্ত্রী হন।
এরপর খুব দ্রুতই ক্ষমতার কেন্দ্র ভুত করতে থাকেন এবং ১৯২৫ সালে নিজেকে একনায়ক হিসাবে ঘোষণা করেন। মুসোলিনির এ শাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সকল চিহ্ন ধ্বংস করে দেয়। তিনি স্বাধীন গণমাধ্যম বন্ধ করে গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডায় রূপান্তর করেন। রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা কারারুদ্ধ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৈশব থেকে ফ্যাসিবাদী আদর্শ ঢুকিয়ে দেয়া হয় এমনকি পাঠ্যপুস্তকেও মুসোলিনির জীবনে স্থান পায়।
হত্যাযজ্ঞ সামরিক পদক্ষেপঃ
মুসোলিনের সবচেয়ে বড় সামরিক পদক্ষেপ ছিল ১৯৩৫ সালে ইথপিয়া আক্রমণ। এ যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করে মুসোলিনি জয় লাভ করেন। এতে অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী সাম্রাজ্যের নিষ্ঠুরতা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসোলিনি ও ক্ষমতাচ্যুত:
তিনি জার্মান একনায়ক এডল্ফ হিটলার এর একান্ত বন্ধুতে পরিনত হোন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসোলিনি যোগদান করার পর তার দুর্বল নেতৃত্ব ইতালিকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়।
রুমে মিত্র বাহিনীর বোমাবর্ষণ, জনসাধারণের অসন্তোষ, এবং রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে মুসোলিনী জনসমর্থন হারাতে থাকে। অবশেষে ১৯৪৩ সালে ফ্যাসিস্ট কাউন্সিল ও রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইমানুয়েল তাকে ক্ষমতা চুত্য করেন এবং গ্রেফতার করেন।
তার জার্মান মিত্র বাহিনী তাকে মুক্ত করলেও তিনি ইতালির পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।
মৃত্যুঃ
১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে সুইজারল্যান্ডে পালাবার সময় প্রেমিকা সহ বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়েন।
মুসোলিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।হিটলার ও তার স্ত্রী ইভা ব্রাউনের আত্মহত্যার দুদিন আগে মুসোলিনিকে হত্যা করা হয়।
মুসোলিনির মৃতদেহঃ
২৯ এপ্রিল ১৯৪৬, মুসোলিনি এবং অন্যান্য ফাসিস্টদের মৃতদেহ একটি ভ্যানে বোঝাই করে দক্ষিণে মিলানে নিয়ে যাওয়া হয়।
লাথি ও থুথু মারার পর লাশগুলো এসো গ্যাস স্টেশনের ছাদ থেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর বেসামরিক নাগরিকদের দ্বারা নীচের থেকে পাথর মেরে ফেলা হয়।যা এক গনপ্রতিশোধে রুপ নেয়। মিলানে তার মৃতদেহ প্রদর্শনের পরে মুসোলিনিকে একটি চিহ্নহীন কবরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
ফ্যাসিবাদ এর জনকের ভয়ংকর ঘৃন্য এই পরিনতি থেকে পৃথিবীতে আগত ফ্যাসিস্টদের শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত।
লেখকঃ
কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক
সিলেট আই নিউজ / এসএম

ফেসবুক পেইজ

ফেসবুক মন্তব্য