

মোঃ লুৎফুর রহমান
প্রকাশ ২৯/০৫/২০২৫ ০৬:২৯:৪৯

ছবি: সংগৃহীত
হবিগঞ্জ পিডিবি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নিজেরাই মানছেন না বিদ্যুৎ আইন এই মর্মে পিডিবি এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক। বিদ্যুৎ অফিসের অনেক অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে বছরে পর বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখছেন অনেক গ্রাহক । সরকারি রাজস্ব আদায়ে চলছে হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের অবহেলা। নির্দিষ্ট সময় সরকার রাজস্ব না পাওয়ায়, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে ব্যহত।
যদিও বিদ্যুৎ বিলে ও হবিগঞ্জ পিডিবি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের অফিসের সামনে বিজ্ঞপ্তিতে লিখা আছে- নির্দিষ্ট সময় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ লাইন কর্তন করা হবে এবং নির্দিষ্ট সময় বিল পরিশোধ না করলে বা বকেয়া পরিশোধ না করলে লাইন কর্তন করা হবে কিন্তু হবিগঞ্জ বিউবো এর এমন বিদ্যুৎ লাইন আছে যা লাগা দুই-তিন বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার পরও বিদ্যুৎ লাইন কর্তন করা হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ এর ধারা ১৮ উপধারা ৩ এ বলা হয়েছে - "বিদ্যুৎ বিল প্রনয়ণ ও আদায়ের সাথে জড়িত বিদ্যুৎ কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোন বিল অনাদায়ী বা বকেয়া থাকলে উহার দায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর উপর বর্তাইবে" কিন্তু অসৎ কর্মকর্তারা শুধু বিদ্যুৎ গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন না এবং কর্মচারীদের দায় অনুযায়ী কর্মচারীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বকেয়া বিল আদায় করছেন না। এতে বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ ধারা ১৮ উপধারা ৩ মানছেন না বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জনাব রাকিবুল হাসান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উক্ত আইনের ১৮(৩) উপধারা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা বলেন- আমরা কেন আমাদের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবো?
পল্লি বিদ্যুৎ বোর্ড যদি যথা সময়ে বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে পারে তাহলে হবিগঞ্জ বিউবো, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ কেন বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে পারেন না এবং বিউবো কেন দুই থেকে তিন মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হলে গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইন কর্তন করে দেয়না। এমন শত শত বিদ্যুৎ বিল দুই-তিন বছর বকেয়া রয়েছে কিন্তু হবিগঞ্জ বিউবো সজন প্রীতি ও অসাধুতার জন্য মামলা দিচ্ছেন না। যে মামলাগুলো দিচ্ছেন তাও তিন-চার বছরের বকেয়া বিলের মামলা। কেন হবিগঞ্জ বিউবো সময় মত বকেয়া বিল আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছেন?
হবিগঞ্জ জেলার সদরের মোহনপুর গ্রামের অধিবাসী আব্দুস সালাম, একই উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের গোলাম মোস্তফা মিয়াসহ অনেক গ্রাহকের অভিযোগ আছে হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিটারের ইউনিট এর চেয়ে দ্বিগুণ ইউনিট লিখে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরি করে গ্রাহককে সরবরাহ করেন। বিদ্যুৎ কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে অফিসে বসেই ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল তৈরি করে থাকেন।
আমার মনেহয় প্রতিটি গ্রাহককে যদি কার্ড মিটার/প্রিপেইড মিটার দেয়া যেত তাহলে অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিগুণ ইউনিট লেখার সুযোগ থাকত না। বিদ্যুৎ মামলাও কমে যেত। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতি করার সুযোগও কমে যেত। কার্ড মিটারে গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মনোযোগী হন বলে জানিয়েছেন অনেক গ্রাহক এবং ভাড়াটিয়ারাও বাসার মাকিকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে চলে যাওয়ার ভয় থাকেনা।
বিদ্যুৎ ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করলে তা একটা নির্দিষ্ট সময়ের (সাত দিনের) মধ্যে প্রতিকার করার বিধান আছে কিন্তু হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ তা মানছেন না। গ্রাহকের দেয়া অভিযোগগুলো তারা বছবের পর বছর ফেলে রেখে দেন কোন প্রতিকার নেন না। এতে হবিগঞ্জ জেলার দুই তিন জন ভুক্তভোগী হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের বিরুদ্ধে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে অভিযোগ করেছেন। আমার মনেহয় অভিযোগ করার পারেও যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলা জজ কোর্টে মামলা করার বিধান রেখে আইন করা উচিৎ বর্তমান সরকারের। এতে বিদ্যুতের দুর্নীতি কমে যাবে, মামলা ও চাকরি হারানোর ভয়ে।
অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহক নিজে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। গ্রাহকের বাড়ি সময় মত বিদ্যুৎ বিল পৌঁছানো হচ্ছেনা। অনেক গ্রাহক বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিলের কপি পাচ্ছেন না। একজনের বিদ্যুৎ লাইন অন্য জনকে দিয়ে ব্যবহার করিয়ে বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে অসাধু কর্মকর্তারা দিচ্ছেন গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা আর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ও কর্মচারীদের কোন মামলা দিচ্ছেন না।
অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসে পাচ্ছেন না। দশটার অফিসে তারা আসেন এগারটায়। অনেক গ্রাহক বিকেলে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল সংগ্রহ করে বা অফিসার দিয়ে বিল তৈরি করিয়ে ব্যাংকিং আওয়ারে ব্যাংকে বিদ্যুৎ বিলের টাকা সময় মত জমা দিতে পারছেন না অফিসারদের সময় মত অফিসে না থাকার কারণে।
নির্দিষ্ট সময় গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিদ্যুৎ লাইন কর্তন করছেন না। তারা গ্রাহকদের বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া করার সুযোগ দিচ্ছেন। বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা গ্রাহকের বিদ্যুৎ মিটার নিজেরা কেটে এনে গ্রাহকের নামে মিথ্যা মামলা দেয় যে, গ্রাহকরা মিটার সরিয়ে ফেলেছে। আমার মনেহয় যদি কোনো বিদ্যুৎ কর্মকর্তা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ মিটার কেটে আনেন তাহলে বিদ্যুৎ গ্রাহকে যেন একটা লিখিত দিয়ে আসেন যাতে লিখা থাকবে মিটার নাম্বার, ব্যবহৃত ইউনিট, কর্মকর্তার সীল সাক্ষর, তারিখ, কাটার সময়, বিবরণ ইত্যাদি বিবরণ । এতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অসাধুতা ও দুর্নীতি কমে যাবে।
এছাড়াও জালালাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র মো. আব্দুল হাই ১৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপ প্রকৌশলী চাদনী আক্তারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক বরাবরেও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। যদি এভাবে সরকারি প্রত্যেকটা বিভাগে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম, দুর্নীতি চলতে থাকে তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়তে হলে এখনই সময় জনগণের সহযোগিতা নিয়ে দেশের এইসব দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও ঘুষখোর সরকারি চাকুরীজীবীদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা তাহলে তারা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না।
হবিগঞ্জ বাসীর সরকারের কাছে চাওয়া, হবিগঞ্জ বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে দুদকের তদন্ত প্রয়োজন।
পাশাপাশি আশা করছি হবিগঞ্জ পিডিবি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের বিরুদ্ধে সিলেট বিউবো (বিভাগীয়) হেড অফিস বিভাগীয় ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন এবং প্রয়োজনে তদন্তে আমার সহযোগিতা নিতে পারেন।
লেখকঃ মোঃ লুৎফুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, বাহুবল, হবিগঞ্জ। [email protected]
সিলেট আই নিউজ / ওপিএম

ফেসবুক পেইজ

ফেসবুক মন্তব্য