সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন



Repoter Image

আই নিউজ ডেস্ক ::

প্রকাশ ১৮/০৯/২০২৩ ১২:৫২:৩৪
অসাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অনন্য উদাহরণ কানাইলাল জিউর আখড়া

পংকজ কান্তি গোপ :: প্রায় সাড়ে ৩শ বছরের পুরোনো এক আখড়ার গল্প বলছি। যেখানে নিয়মিত পূজার্চনা হচ্ছে কানাইলালের;  অথচ আখড়ার সমস্ত ভূমি দান করেছেন একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার। তাও কয়েক শতাংশ নয়। প্রায় সাড়ে ৪'শ শতাংশ (১১কেদার) ভূমি। তবে বর্তমানে আখড়াটির মোট জমির পরিমাণ ২৪ একর। ভাবা যায়! অসাম্প্রদায়িক বাঙালির এক অভূতপূর্ব নিদর্শন এই  'শ্রী শ্রী কানাইলাল জিউর আখড়া'। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নের চকহায়দরে আখড়াটির অবস্থান। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবল উপজেলার ডুবাই বাজার থেকে ১কি.মি.পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে সুদৃশ্য আখড়াটির। 

আমি নিশ্চিত, আপনাদের মনে এখন কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কে সেই ব্যক্তি, যিনি এতো জমি দান করলেন? কাকে দান করলেন? কিংবা, কেনই বা দান করলেন? 

আসুন, ফিরে যাই সাড়ে তিনশ বছর আগেকার ঘটনায়। 

তৎকালীন ভারতবর্ষে শ্রী শ্রী কানাইলাল জিউর দুটি আখড়া ছিল। একটি ভারতের করিমগঞ্জের অদূরে কানাইবাজারে, অন্যটি বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার স্থানঘাট ইউনিয়নে। 

১১০০ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখের কথা। শ্রী শ্রী কানাইলাল জিউর আখড়ার মোহান্ত শ্রী আকুতরাম গোস্বামী গভীর সাধনায় নিমগ্ন। তখন হবিগঞ্জের সুলতানসীর জমিদার সৈয়দ হায়দর আলী নৌকায় করে সেই স্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন। জমিদারের নৌকা আখড়ার কাছে একটি স্থানে আটকা পড়ল। এ ঘটনায় জমিদার কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ভজনরত আকুতরাম গোস্বামীর নিকট গেলেন। শ্রী আকুতরাম গোস্বামী জমিদারকে দেখে বললেন, 'আপনার নৌকা চলবে, ফিরে যান।' সাধুজীর আশ্বাস বাক্যে জমিদার প্রসন্ন মনে ফিরে দেখেন, নৌকা চলছে।

অন্য একদিন জমিদার সাহেব প্রজাদের অবস্থা দেখার জন্য হাতিতে চড়ে ডুবাঐ অঞ্চলে আগমন করেন। তখন বর্ষাকাল। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে আটকা আটকা পড়ে জমিদারের হাতি। আর চলতে পারছে না। জমিদার কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এমন সময় তাঁর মনে পড়ল বিগত সফরের সময় নৌকা আটকা পড়ার কথা। এই কথা মনে হতেই তিনি শ্রীআকুতরাম গোস্বামীর নিকট যান। তখন গোস্বামী আকুতরাম সুললিত কণ্ঠে গান করছিলেন। জমিদারকে দেখে তিনি হাসতে লাগলেন এবং বললেন, "যান, কিছুক্ষণের মধ্যে দুর্যোগ কেটে যাবে।" যেই কথা সেই কাজ। জমিদারের হাতি উঠে দাঁড়ালো এবং চলতে লাগলো। শ্রীআকুতরাম গোস্বামীর অলৌকিক শক্তি দর্শন করে সৈয়দ হায়দর আলী বললেন, "আপনাকে আমি কিছু জমি দান করতে চাই। যদি কৃপা করে তা গ্রহণ করেন তবে আমি কৃতার্থ হবো।" জমিদারের কথা শুনে আকুতরাম গোস্বামী হাসলেন। এসময় তাঁর হাতের একটি ঢাসা (চিমটা) জলের মধ্যে নিক্ষেপ করলেন। এর ফলে জলাভূমিতে এক চর জেগে উঠল। জমিদার এই চর দেখে অভিভূত হলেন এবং তৎক্ষনাৎ শ্রীআকুতরাম গোস্বামীকে ১১ কেদার (১কেদার=৪০শতাংশ) ভূমি দান করেন। সেই থেকে ওই জায়গা 'চকহায়দর' নামে পরিচিতি লাভ করে। 'চর' থেকে 'চক' (বাহুবলে চর'কে 'চক' বলা হয়) আর জমিদার হায়দরের নামে 'হায়দর'। 

ভূমি সম্প্রদানের দলিলটি ফার্সি ভাষায় লিখিত এবং বর্তমানে আখড়ায় তা সংরক্ষিত আছে। তবে বর্তমানে আখড়ার প্রায় ৫ হাল (২৪একর) জমি আছে। 

সেই দানপত্রে একটি বিশেষ বাণী লিখিত আছে। বাণীটি হলো, "সেবা করিতে থাক এবং দোয়া করিতে থাক।" প্রায় সাড়ে ৩'শ বছর পরও আখড়াটির বর্তমান অধ্যক্ষ শ্রীমৎ অনন্ত দাস মোহান্তজীও এ বাণীর মর্যাদা রক্ষা করে চলছেন। মানুষের সেবা করাই এ আখড়ার মূল লক্ষ্য। আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের দিক দিয়ে সিলেট বিভাগের মধ্যে অন্যতম এই আখড়াটি। তবে এখনো প্রাচীনত্বের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি 'তেঁতুল গাছ'। যেটি আকুতরাম গোস্বামীর রোপিত।

লেখক

সংস্কৃতিকর্মী

শিক্ষক, পুটিজুরী শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় বাহুবল, হবিগঞ্জ

সিলেট আই নিউজ / এসএম

মাই ওয়েব বিট

আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর মনিটরিং করার জন্য এটা ব্যবহার করতে পারেন, এটি গুগল এনালাইটিক এর মত কাজ করে।

ফেসবুক পেইজ