মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম: আজ ২১ জানুয়ারি সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয়মুখ নবীগঞ্জ উপজেলার প্রথম পত্রিকা ‘মাসিক গোপলা’র সম্পাদক ও প্রকাশক, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কবি মিজান মোহাম্মদের জন্মদিন। তিনি ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের এইদিনে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গোপলার বাজারে এস এম আলী আকবর ও রহিমা বেগমের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন।

মানুষমন্ত্র’র কবি মিজান মোহাম্মদ একাধারে গল্পকার, ছড়াকার, নাট্যাভিনেতা, সংগঠক, রক্তদাতা ও একজন মেধাবী ছাত্র। আউশকান্দি রাশিদিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ-নবীগঞ্জ থেকে এস. এস.সি পাশের পর সিলেটের এতিহ্যবাহী মদনমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচ এস সি, হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক (B.B.S) ও স্নাতকোত্তর (M.B.S) ডিগ্রী লাভ করেন। পাশাপাশি তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাংকিং ও ফাইনান্সে এম বি এ (M.B.A)ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি উচ্চতর প্রফেশনাল ডিগ্রী অর্জনের জন্য ICMAB Level-3 তে অধ্যায়নরত। এছাড়া তিনি সিলেট ল’ কলেজ থেকে এল এল বি (L.L.B) পাশ করে সিলেট জজ কোর্টে শিক্ষাণবীস আইনজীবি হিসেবে কর্মরত আছেন।

মিজান মোহাম্মদ ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করলেও দুই বছর পর যোগ দেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ধাবি গ্রুপের এয়ারটেলে। সেখান থেকে আবার ফ্লোরা টেলিকমে। বর্তমানে থিতু হয়ে আছেন দেশসেরা গ্রুপ অফ কোম্পানি পারটেক্স স্টার গ্রুপে।

তার সম্পাদনায় ইতোমধ্যে দুর্লভ (ডিসেম্বর-৯৯), ভালোবাসার দিন (ফেব্রুয়ারি -২০০০), দুর্লভ (এপ্রিল-২০০১), হৃদয়ের সাথী ( জুলাই-২০০২), চমক (জানুয়ারি -০৩), মাসিক দবক (জানুয়ারি -০৩), বিলাসী (অক্টোবর-০৩), বিবিধ, ঈদ বোনাস (মে-২০০৪), শিকারি (জুলাই-০৬), বিবিধ (জুলাই-০৭), সুহৃদকন্ঠ (ফেব্রুয়ারি -২০১০), স্পর্শবাঁক (নভেম্বর-২০১৭) ছাড়াও মাসিক গোপলা সহ প্রায় শতাধিক সাহিত্য সাময়িকী ও পত্রিকা আলোর মুখ দেখেছে।

তাঁর প্রথম যৌথকাব্য গ্রন্থ ‘তোমার হৃদয়ে যা দেখেছি’ যা প্রকাশ ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ও একক কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষমন্ত্র’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে।

মিজান মোহাম্মদের প্রথম লেখা প্রকাশ হয় ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে হবিগঞ্জের ‘সাপ্তাহিক খোয়াই’ পত্রিকায়। বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতার করার পাশাপাশি তার নিজ উপজেলা নবীগঞ্জ থেকে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ‘মাসিক গোপলা’ আটারো বছর যাবত প্রায় নিয়মিত প্রকাশ করছেন। যা ইতিমধ্যে ১০৩টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।

সারা সিলেট জুড়ে মিজান মোহাম্মদকে ডাকা হয় মানবিক মানুষ বলে। তার সামাজিক কর্মকান্ডের কারণে তিনি দেশজুড়ে পরিচিত। অকাতরে রক্ত দিয়ে মৃত্যু পদযাত্রীদের পাশে বার বার দাঁড়িয়ে জয় করে নিয়েছেন হাজারো মানুষের হৃদয়, এর স্বীকৃতি স্বরূপ ইতিমধ্যে তিনি পেয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলার সর্বোচ্চ রক্তদাতা সম্মাননা, পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ রক্তদাতা সম্মাননা, পেয়েছেন জয়বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা, পেয়েছেন রেডক্রিসেন্ট মুজিব জাহান সোসাইটি কর্তৃক সম্মাননা। উল্লেখ্য যে, তিনি ইতিমধ্যে নিজে ২৭ বার রক্তদান করেছেন। এবং কয়েকশত ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে মুমূর্ষু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মিজান মোহাম্মদের সাংবাদিকতার হাতেখড়ি দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেসে ২০০১ সালে। বর্তমানে তিনি পাঠকপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা রানিং সিলেট ডটকম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রিন্ট পত্রিকা আমাদের সিলেট এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি সিলেট প্রতিদিন, সিলেট দর্পণ ও সিলেট আইনিউজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন।

নবীগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনগুলোর মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করতে শুরু করেন নিয়মিত কবিতা পাঠের আসর। প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার সাহিত্য আসর করে নিয়মিত ভাবে ‘দবক’ নামের সাময়িকী প্রকাশের শুরু ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে। যা দীর্ঘদিন চালু ছিল। তার অনুপ্রেরণায় অনেক তরুণ ও যুবক খেলাধুলার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা ও সাংবাদিকতায় নিয়োজিত হয়।

তিনি সাড়া জাগানো সামাজিক সংগঠন রিলেশন গ্রুপের প্রতিষ্টাতা সভাপতি, ‘দূর্লভ সাহিত্য পরিষদ ‘ নবীগঞ্জ এর বর্তমান সভাপতি ও প্রতিষ্টাতা সাধারণ সম্পাদক, জয়বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, নবীগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সিনিয়র কার্যকরী সদস্য এবং মাদক ও ধূমপান প্রতিরোধ পরিষদ- সিলেটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি সিলেটের বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।

তার অভিনীত সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটক “শিকারী”, “অপরাজিত ভালোবাসা” ব্যাপক দর্শক নন্দিত হয়েছে। সদালাপি ও সুন্দর মনের মানুষ মিজান মোহাম্মদ এর জন্মদিনে রইলো অজস্র অভিনন্দন ও শুভ কামনা। তার আগামীর পথ আরো মসৃণ এবং সুখের হোক এই কামনা করি।

লেখকঃ কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক

সিলেট আই নিউজ / এমএনআই